ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলা চলচ্চিত্রের এক অতি পরিচিত নাম, যার জনপ্রিয়তা কেবল বয়স্ক মানুষের মধ্যে নয়, বরং নতুন প্রজন্মের মাঝেও রয়েছে সমানভাবে। তিনি সেলুলয়েডের নায়ক এবং রাজপথের নায়ক হিসেবে পরিচিত। আজ ২৪ ডিসেম্বর তার জন্মদিন, এবং এই বিশেষ দিনে এক ঝলক ফিরে দেখা যাক তার জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক।
১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তার বাবা হাজী আব্দুল আলী এবং মা সরুফা খাতুন। কৈশোর থেকেই অভিনয়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল তার, এবং তিনি নানা নাট্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন।
১৯৭৭ সালে কিংবদন্তি নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটে। সেলুলয়েডের রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হলেও, পরবর্তীতে তিনি একাধিক ধারার চরিত্রে সফলভাবে অভিনয় করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ চলচ্চিত্রটি এখনও বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম কালজয়ী কাজ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
চার দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাড়ে ৩৫০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। রোমান্টিক নায়ক থেকে অ্যাকশন, কমেডি, পারিবারিক—সব ধরনের চরিত্রে তিনি নিজেকে সমানভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন সেই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক ও জসিমদের মতো কিংবদন্তি নায়কদের সঙ্গে।
চলচ্চিত্রের বাইরে, ইলিয়াস কাঞ্চন সমাজসেবায়ও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন দেশজুড়ে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। তার স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর পর এই আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
ক্যারিয়ারে একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার পেয়ে তার অভিনয়ের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে, যা তার সমাজসেবায় অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা।
ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের এক মহান নায়ক, যিনি সেলুলয়েডের নায়ক থেকে রাজপথের নায়ক হয়ে আজও জনগণের হৃদয়ে বেঁচে আছেন।